সোমবার, জুন ২৩, ২০২৫
প্রতিষ্ঠাতা

আল্লামা আব্দুশ শাকুর (রহ) ( প্রতিষ্ঠাতা )

  • Died Date: এপ্রিল ০৫, ২০১৩
  • প্রতিষ্ঠাতার সংক্ষিপ্ত জীবনি

    দূর্লভপুর মুহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা,সৎপুর মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক,খলিফায়ে ফুলতলী                  আল্লামা আব্দুশ শাকুর দুর্লভপুরী হুজুর (র.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনি।                                                                                                      মো. বায়েজীদ আহমদ

    নাম ও বংশ পরিচয়: পিতামাতার নির্বাচিত নাম ছিল শুকুর আলী। সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসায় ভর্তিকালে মুহতামীম ছাহেব নাম পরিবর্তন করে রাখেন আব্দুশ শাকুর। পিতার নাম মনোওর আলী। দাদার নাম শেখ দোহাই এবং মায়ের নাম ছিল সাহেবের মা। তিনি ১৯৪৪ সালে জানুয়ারী মাসে সুনামগন্জ জেলার ধর্ম পাশা উপজেলার চকিয়া চাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

    মাতৃ ও পিতৃ বিয়োগ: মাত্র দু'বছর বয়সেই তিনি তাঁর মাকে হারান। মায়ের ইন্তেকালের পর পিতার কাছে লালিত পালিত হন। মায়ের শূণ্যতা তাঁর পিতা পূর্ণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিধির বিধান অপরিবর্তনীয়। মায়ের ইন্তেকালের তিন বছর পর তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। তখন তিনি পাঁচ বছরের অবুঝ বালক।

    দরিদ্রতার শিকার এতিম বালক: জীবন ধারণের মত সহায় সম্বল তাঁর কিছুই ছিল না। মাত্র সাত বছরে পর্দাপণ করেই তিনি দরিদ্রের যাতনায় শিকার হয়ে ছুটে যান জীবিকার অন্বেষণে জীবন ধারণের জন্য তিনি সর্ব প্রথম তাঁর খালুর ভাইয়ের বাড়িতে নির্ধারিত কাজে।

    লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি: তিনি যখন তাঁর খালুর ভাইয়ের বাড়িতে কাজ করতেন তখন তাঁর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তীব্রতর হয়। সাংসারিক কোন কাজ তার কাছে ভাল লাগেনি। তিনি সর্বদা ভাবতেন আমি যা উপার্জন করছি তার বিনিময়ে কেউ যদি আমাকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিত তাহলে আমি যে সুযোগ গ্রহণ করতাম।

    সিলেট গমন: তিনি সর্বদা যে কল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন হঠাৎ একদিন দয়াময় আল্লাহ সে কল্পনা বাস্তবে রূপ দিলেন তাঁর চাচাতো ভাই জনাব ক্বারী আব্দুর রহমান ছাহেব তাঁর উপার্জিত পাঁচ মন ধান বিক্রি করে তাঁকে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে সিলেটে নিয়ে আসেলেন। এ পাঁচ মন ধানের টাকাই ছিল তার ছাত্র জীবনের সূচনার সম্বল।

    শিক্ষা জীবনের সূচনা: তিনি তাঁর নানার বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে কিছু দিন স্থানীয় মক্তবে গিয়ে ছিলেন। এছাড়া তাঁর প্রথম জীবনে লেখাপড়ার আর কোন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি, তাই তিনি ১৯৫৩ সনে প্রায় নয় বছর বয়সে লেখাপড়া আরম্ভ করেন।

    সৎপুর মাদরাসায় ভর্তি: তিনি শিক্ষা লাভের আকাঙ্খা নিয়ে ১৯৫৩ সালে সৎপুর দারুল হাদীস আলিয়া মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। শত প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে ইলম অর্জনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১৯৫৯ সনে দাখিল ও ১৯৬১ সালে আলিম অত্যন্ত সফলতার সাথে কৃতকার্য হন এই মাদরাসা থেকে।

    ফাযিল ও কামিল নৈপুন্য: তিনি কুমিল্লা জেলার বেলচু সিনিয়র মাদরাসা হতে ১৯৭০ সালে ফাযিল ও ১৯৭৩ সালে সৎপুর মাদরাসা হতে হাদীস বিভাগে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আবার চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ ওয়েজেদিয়ো আলিয়া মাদরাসা হতে তিনি ফিকহ বিভাগে কামিল পাশ করেন।

    কর্মজীবন: শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পরেই তিনি ঐহিত্যবাহী সৎপুর আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে ইবতেদায়ী পদে এবং পরবর্তীতে সহকারী মৌলভী পদে যোগদান করে অবসর গ্রহণ করেন।

    দাম্পত্যজীবন: স্বজন হারা নিঃসঙ্গ জীবনে সামান্য ঠাঁই পাবার আশায় তিনি দুলর্ভপুরের হাজী আমির আলী ছাহেবের কন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আমির আলী ছাহেবের কন্যা মোছাঃ ফুলবানু একজন গুনবতী ধার্মিক ও খোদাভীরু রমনী ছিলেন।

    মুর্শিদের সোহবাত: তিনি অত্যন্ত খোদাভীরু ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। রাসুল প্রেম ছিল তাঁর হৃদয়ে ভরপুর, উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ যামানার মুজাদ্দিদ শামছুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহ.) এর কাছ থেকে তরিক্বতের ছবক নিয়ে উচ্চস্থর  লাভ করেন । আমলে আখলাকে তিনি ছিলেন একজন সুফী সাধক, সারাটা জীবন তিনি ছিলেন প্রচার বিমুখ।

    দ্বীনী খিদমাত:

    ১। ১৯৭০ সাল থেকে নিজ বাড়িতে সবাহি মক্তব হিসেবে বয়স্ক মহিলাদের দ্বীনি শিক্ষা ও তালীম তরবিয়ত প্রদান করতেন যা অধ্যবদি জারি আছে।

    ২। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সৎপুর কামিল মাদরাসায় কৃতিত্বের সাথে ইলমে দ্বীনের খিদমত করে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

    ৩। ১৯৭২ সাল থেকে এলকাবাসীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস উদযাপন বিশেষ করে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল যথাযথ মর্যাদায় পালন করতেন। যা বর্তমানে চলমান।

    ৪। ১৯৭৩ সালে নিজ গ্রাম ধর্মপাশা উপজেলার চকিয়াচাপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের একটি শাখা যা বর্তমানে খামিছ স্তরের কেন্দ্র হিসেবে ইলমে কুরআনের খেদমত করে যাচ্ছে।

    ৫। ২০০৪ সালে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (রহ.) এর বড় ছাহেবজাদা মুরশিদে বরহক্ব আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব ফুলতলী উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন দূর্লভপুর মুহাম্মদীয়া দাখিল মাদরাসা। এই দ্বীনি দরসগাহ এলাকায় ইলমের আলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি ঘরে ঘরে। দেশ বিদেশের হুজুরের সকল বক্ত আশিকান এই প্রতিষ্টান কে আর্থিক সহযোগীতায় ও সুপরামর্শ দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন।

    ইন্তেকাল: এই ক্ষনজন্মা মনীষী ২০১৩ সালে ৪ই মে পরলোকগমন করেন। তার জানাযায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (রহ.) এর ছোট ছাহেবজাদা আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ইমামতি ও দোয়ার মাধ্যমে  নিজ প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

    সূত্র: একটি রবির উদ্ভাস।

    Messenger Chat